
আমাদের লেখা আকাশ ফুঁড়ে যাক…
মানসপটে কল্পনার এক প্রচন্ড বিস্ফোরনের ফলেই এ উপন্যাস লেখা সম্ভব হয়েছে। গল্পের সময়কালঃ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, ২০২৮ থেকে ৫৩ পর্যন্ত [হেক্টরের জন্ম]। তারপরও আরও ৮১ বছরের কথা উল্লেখ আছে। এক’শ ছয় বছর। এ গল্প লেখার তাড়না অনুভব করতে হয়েছে, গবেষণা চালাতে হয়েছে, ধ্যান করে নিজেকে গর্ভবান করতে হয়েছে, তবেই তিনি লিখতে পেরেছেন।
হেক্টর নামে এক ভ্রুন পৃথিবীতে আসতে চাইছে। শাদাব কবীর তাকে চাইছেন। ব্যপারটি সহজ নয়। এই সময়টিতে মাতৃগর্ভ ভাড়া দেয়া-নেয়ার চল বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেছে। একটি ভ্রুনের জন্মের আগেই শুরু হয় জন্মযাত্রা, তারপর জীবন এবং শেষে মৃত্যু। শাদাবের স্ত্রী শাওলী। তাদের পালিত সন্তান নোয়াহ। তার গল্প আছে। উপন্যাসের একটি পর্যায়ে আমরা হেক্টরকে খুঁজে পাই না। তাকে নিয়ে পাঠক হিসেবেও অনেক চিন্তা হয়। কখন আসবে সে। এ সময় ঢাকা শহর একটি প্রধান চরিত্র হয়ে দেখা দেয়। এরই মধ্যে দেখা দেন আসলাম কাজেম ও তার কন্যারা।
ঢাকা শহর ভুমিকম্পে ধ্বংস হয়ে পরিত্যক্ত হয়। শহর ধ্বংস, ধ্বংসের কারণ এবং ধ্বংস-পরবর্তী ঢাকার যে বর্ননা লেখক দিয়েছেন, তা করতে গিয়ে শুধু কল্পনার বশবর্তী হওয়া যথেষ্ঠ ছিল না। এই ২০২০ সালেও এ শহরকে নিয়ে একটু ভাবলেই এর ভবিতব্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তাকে [লেখককে] অনেক গবেষণা করতে হয়েছে। ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করে খুটিনাটি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, লোভ-লালসা তিনি ছবির মত তুলে ধরেছেন। শহরটির ভবিতব্য তাই ছিল – ধ্বংস।
কয়েকটি লাইন খুব ভাল লেগেছে, তা তুলে ধরিঃ “প্রকৃ্তি ঢাকাকে যতটা ধ্বংস করেছে তার চেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে ঢাকার মানুষের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য। ওই ক্রমবর্ধমান বৈষম্য তলায় পড়ে থাকা মানুষদের কখন যে দুর্ধর্ষ করে তুলেছিল তা কেউই টের পায়নি। তারা তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করেছে কবে ঢাকা বিপন্ন হবে। সামান্যতম সুযোগকেও তারা নষ্ট করেনি”।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব উপলব্ধি করতে ও মূল্য দিতে বাংলাদেশের মানুষকে অনেক খোয়াতে হয়।
শাদাবের স্ত্রী শাওলী ঘটনাক্রমে মারা যান। শাদাবের আবার বিয়ে হয়। কিন্তু হেক্টরকে পৃ্থিবীতে নিয়ে আসার প্রতিজ্ঞায় অনড় থাকেন। খুব বেশি বলবো না। বললে সবাই বইটি পড়বেন না। এখন পড়ার প্রবনতা কম। এই বইটি পড়তে হবে।
তবে একেবারে শেষের অধ্যায় লেখক খুব সহসাই শেষ করে দিয়েছেন। মনে হয়েছে তার তাড়া ছিল। কিংবা তিনি হেক্টরকে নিয়ে আরেকটি গল্প লেখার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখলেন। অন্ততঃ শেষে ব্রাকেট-বন্দি লাইনগুলো পড়ে তাইই মনে হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি তার স্বপ্নের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। হেক্টর দেশের মানচিত্র বদলে দেয়, বাংলাদেশ হয় সুখী দেশ, পৃ্থিবীর সব দেশের মানুষের আকাংক্ষিত বসবাসের স্থান।
লেখককে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, সমাজ, অর্থনীতি, সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে হয়েছে। এটি শুধু এক ভ্রুনের গল্প নয় – এটি ভবিষ্যতের সমাজের গল্প, অর্থনীতির গল্প, সম্পর্কের গল্প, এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
সাহিত্যে আমরা যেমন ভাষার কিছুটা অলংকরণ আশা করি তা বোধহয় এই উপন্যাসে কিছুটা অনুপস্থিত। ঘটনাবহুল এক গল্প বলতে গিয়ে বাংলা ভাষা কিছুটা অবহেলিত হয়েছে। লেখকের উপমা-শক্তি খুব ভাল। সবাই এটা পারেন না। তবে পড়তে-পড়তে শত-শত ইংরেজী শব্দের দেখা পেয়েছি যা পঠন-মধুরতায় নিষ্ঠুর ভাবে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। মনে হয়েছে আর পড়বো না। কিছু শব্দ ইংরেজীতে না দিয়ে উপায় ছিল না। তবে তার অনেকগুলো ইংরেজীতে যেমন করে উচ্চারিত তেমন করে লেখা হয় নি। আমি যতটা মন দিয়ে বইটি পড়েছি তেমন মন দিয়ে সম্পাদনা করা হয়নি। আশা করি এর পরের সংস্করণে তা করা হবে।
গল্পটি আরো অনেক ভাষায় অনুদিত হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে হিন্দীতে। হিন্দীভাষীদের জানা দরকার বাংলাদেশে এমন গল্প লেখা হয় [আমার ভাবনা]। নেটফিক্স সিনেমা কোম্পানীর কাছে দেয়া যেতে পারে। এই গল্প তাদের পছন্দ হবে।
আমাদের গল্প লেখা আকাশ ফুঁড়ে যাক…
#পড়তে_পড়তে
স্যার, প্রকাশনীর নাম টা উল্লেখ করে দিতেন যদি আমাদের জন্য বইটি সগ্রহ করা সহজ হত।
অনেক অনেক দিন পর এ ধরনের একটি গ্রন্হ সমালোচনা পড়লাম। লেখার আলোচনা পড়তে পড়তেই উপন্যাসটি পড়ার খুব লোভ হলো। কিন্তু ইদানিং আমার হাতে সময় থাকে খুব কম।
বইটি সংগ্রহের আর কোনো উপায় জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।
সমালোচনা এ ধরনের গঠনমূলক. এ ধরনের স্বপ্নছোঁয়া হওয়া দরকার।