
কলিন উইলসনের ‘দ্য আউটসাইডার’
‘আউটসাইডার’কে আমরা বাংলায় যাই বলি না কেন, আউটসাইডার বললেই মনে হয় বেশি অর্থবহ হয়। বহিরাগত বা আগন্তুক বলা যায়। আলব্যের কামু তাঁর উপন্যাসের নাম ‘স্ট্রেইঞ্জার’ দিয়েছিলেন; সে কথা ভাবলে ‘আগন্তুক’ বলা যায়, কিন্তু তার ভাবার্থ বোধহয় ‘বহিরাগত’ – বাইরের সেই মানুষটি – আমাদের নয়, গতানুগতিক নয়।
ব্রিটিশ লেখক কলিন উইলসনকে বাংলাদেশের পাঠকরা খুব চেনেন না; চিনলেও তাঁকে নিয়ে কোথাও কোন আলাপ শুনিনি। আমায় প্রথম কলিন উইলসনের লেখার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আমার বন্ধু-সহকর্মী মতিউর রহমান সিদ্দিকী – যিনি নিজেও ছিলেন একজন আউটসাইডার। সিদ্দিকী ও আমি একসাথে ‘দ্য ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস’-এ কাজ করতাম।
কলিন উইলসন জন্মেছিলেন ইংল্যান্ডের লেস্টার-এ ১৯৩১ সালে। তিনি চলে গেছেন ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে।
কলিন একটু হিমু টাইপের মানুষ ছিলেন। হ্যাম্পস্টেড হীথ-এ স্লিপিং ব্যাগে ঘুমাতেন। জীবনের অনেকটা সময় একাকী কাটিয়েছেন। লিখেছেন, লিখেছেন আর লিখেছেন।
‘দ্য আউটসাইডার’ তিনি লিখেছিলেন চব্বিশ বছর বয়সে। শুরু করেছিলেন জার্নাল হিসেবে, পরে বইয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এই বইতে কলিন একজন আউটসাইডার বা বহিরাগত মানুষের মানস পর্যালোচনা করার চেষ্টা করেছেন। এবং তার আগে তাঁকে পড়তে হয়েছিল সাগর-সমান বইপত্র।
বহিরাগতের মন বুঝতে তাকে পড়তে হয়েছিল এইচ জি ওয়েলস, কাফকা, কামু, সার্ত্র, টিএস এলিয়ট, হেমিংওয়ে, হারলে গ্যানভিল-বার্কের, হারমান হেস, টিই লরেন্স, ভ্যান গঘ, বার্নার্ড শ, উইলিয়াম ব্লেইক, দস্তয়েভস্কি, নিৎসে, গার্জিয়েফ – এদের লেখা। আসলে এদের অঙ্কিত চরিত্রগুলোর সাথে পরিচয়ের পরই কলিনের মনে বইটি লেখার ভাবনাটি আসে। লেখা শুরু করেছিলেন চুয়ান্ন সালে, বই বেরিয়েছিল ছাপ্পান্নতে।
বইটি বাজাত মাত করে দিয়েছিল। এই বই আমায় সিদ্দিকী দিয়েছিলেন পড়তে – সেই চুরানব্বই সালে। তখন তেমনটা বুঝিনি। সামান্য পড়াশোনায় এই বই বোঝা কষ্টকর। এখন কিছু কিছু বুঝতে পারছি।
কলিন বই লিখেছেন এক’শ পঞ্চাশটি বা তারও বেশি। তার বেশ কিছু বই কিনে আমায় পাঠিয়েছে আমার কন্যা আরমীন কবীর এবং বন্ধু নিসার আহমেদ। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ মতিউর রহমান সিদ্দিকীর কাছে। তিনি এখন পৃথিবীতে বেঁচে নেই। তিনি যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন।