Photo: Google

অনিয়ম, বিষাক্ত পশু ও গল্পহীন গল্প

অনিয়ম তাহলে নিয়মই থেকে যাচ্ছে

সড়কে গাড়ি চলাচলের যে কোনো উন্নতি হয়নি তা ঢাকা শহরের রাস্তাগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এখনও গাড়ির চাকার নিচে মানুষ  মরছে। আমরা সবাই-ই যে অনিয়মকে নিয়ম মনে করে চলাফেরা করছিলাম, সেই অনিয়মকেই আঁকড়ে ধরে আছি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনগণকে নিয়মনীতি মেনে চলাচলের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। তার কথাটি তখন কেউ তেমন আমলে নেননি। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমরা কতটা সাবধান হয়ে, কতটা আইন মেনে চলাচল করছি? গাড়ির নিচে পড়ার ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের ভুল কতটা?’

তিনি ঠিকই প্রশ্ন রেখেছিলেন। ধরে নিলাম, লাইসেন্সবিহীন চালক গাড়ি চালাচ্ছেন, গাড়িরও ফিটনেস নেই, তারা মানুষের গায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু নিজের দিকে একটু তাকালেই বোঝা যায়, আমরা নিজেরাই কেমন করে গাড়িগুলোর নিচে গা পেতে দিচ্ছি। রাস্তা পেরুনোর সময় আমাদের আর কোনো দিকে খেয়াল থাকে না। লাল, হলুদ কি সবুজ বাতি; গাড়ি থেমেছে কি থামেনি; জেব্রা-ক্রসিং আছে কি নেই – কোনো দিকেই আমাদের তোয়াক্কা নেই। আমরা সোজা নাক বরাবর চোখ মেলে চলছি তো চলছিই। কানে মোবাইল ফোন লাগিয়ে দুরন্ত রাস্তায় সমুদ্র সৈকতে হেঁটে বেড়ানোর মতো করে চলছি। একটি চলন্ত ট্র্যাফিকের মধ্যে ছোট্ট বাচ্চার হাত ধরে তাকে পার করাচ্ছি। রাস্তার ঠিক মধ্যখানে চলন্ত বাস থেকে নেমে পড়ছি, পেছন থেকে আর কোনো গাড়ি আসছে কিনা তা দেখছি না। আমাদের ভাবখানা এমন যে আমাদের দেখে গাড়িগুলোকে থেমে যেতে হবে।

নিজের গাড়িতে নিজের ড্রাইভার আইন মেনে গাড়ি চালালেন কিনা তা আমাদের নজরে আসে না। আমার নিজের চালক যদি নিয়ম অমান্য করে কাউকে ধাক্কা দেয়, তাহলে তার পক্ষ নিয়ে আমরা মারামারি করতেও প্রস্তুত। মাঝে-মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা নিজেরা কি গাড়ি চড়ার কিংবা চালানোর যোগ্য হতে পেরেছি? গরুর গাড়িই বোধহয় আমাদের সঠিক বাহন। না হলে আমরা কেন গাড়ির নিচে পড়ে মরবো? শুধুই কি চালকের দোষে? শুধুই কি গাড়িওয়ালার দোষে? আমাদের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে অনিয়ম ঢুকেছে, অনিয়ম বাসা বেঁধেছে। আমাদের নিজেদের বদলানোর সময় এসেছে। শুধু অন্যকে দোষারোপ না করে একটু নিজের দিকে তাকাই না কেন? জানি না ক’দিন পরই যখন সবাই ঈদে বাড়ির পথে রওনা দেবেন, তখন আরো কতই না প্রাণহানি হয়!

বিষমুক্ত পশু চাই

ঈদুল আজহার সময় এসে গেছে। একটি গবাদি পশু কিনতে হবে কোরবানি দেয়ার জন্য। সারা দেশের মানুষ তা নিয়ে ব্যস্ত এখন। তবে আমার বাড়ির সদস্যদের কাছ থেকে পরামর্শ পেলাম, এবার যেসব পশুকে অস্বাভাবিকভাবে মোটা-তাজা বানানো হয়েছে তা যেন না কিনি। সঠিকভাবে লালন-পালন করা হয়েছে এমন পশু কিনতে চায় বাড়ির সবাই। তাদের চাওয়াটি খুব ভালো লেগেছে। আমারও ইচ্ছে তেমনই। কিন্তু তেমন পশু, বিশেষ করে গরু পাই কোথায়?

গরুকে অনেকদিন ধরেই স্টেরয়েড দেয়া হচ্ছে। স্টেরয়েড মানুষের জন্য তৈরি একটি ওষুধ। ডেক্সামিথাসন গ্রুপের। এটি জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মানুষকে সচল করার জন্য খাওয়ানো হয়। ডাইক্লোফেনাক, ওরাডেক্সন, স্টেরন, ডেক্সাসন, এডাম কোরটান, কোরটিজল, হাইড্রো কোরটিজল এবং অতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহার করে কোরবানির পশুকে দ্রুত অস্বাভাবিক মোটা-তাজা করা হচ্ছে। এবং যথারীতি আমরা এমন পশু কিনবো। কোরবানি হবে; কিছু মাংস আমরা খাবো এবং কিছু মাংস বিলিয়ে দেয়া হবে। এই মাংস খেলে কি হতে পারে আমরা কি জানি? হয়তো অনেকেই জানি। আমাদের দেহে ওই হরমোনগুলো বেড়ে যাবে এবং তৈরি করবে নানা  জটিলতা। জানলেই বা কি? যেমনই হোক গরুতো কিনতেই হবে!

দেশে এমন অবস্থা অনেকদিন ধরেই চলছে, তবে আমরা কেউই কিছু করিনি – না সরকার, না সাধারণ জনতা। গণমাধ্যমকর্মীরা এ নিয়ে অনেক বছর ধরেই লেখালেখি করছেন। তবে বোধ হয় সম্প্রতি সবার ভেতরে বিষয়টি কিছুটা হলেও নাড়া দিয়েছে। এসব এখনই বন্ধ না করলে কী হতে পারে তা সবাই বোধ হয় বুঝতে শুরু করেছেন।

সবার এখন এক বাক্যে বলা উচিত, আমরা কেউ আর ওষুধ দেয়া কোরবানির পশু কিনতে চাই না। এর বিরুদ্ধে এখনই আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

গল্পহীন এই দেশে

চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সাদিকা পারভিন পপির একটি সাক্ষাৎকার পড়লাম একটি বাংলা কাগজে। ঈদ উপলক্ষে পপি অভিনীত কোনো ছবি আসছে কিনা তা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তাকে বড় পর্দায় তেমন পাওয়া যাচ্ছে না কেন- এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, তিনি ভালো গল্পের অপেক্ষায় আছেন। ‘ভালো গল্প’ কথাটি লক্ষণীয়। ইদানিং ছোট এবং বড় পর্দার  অভিনেতা-অভিনেত্রীদের  কণ্ঠে প্রায়ই এমন কথা শোনা যায়। তাদের মতে, ভালো গল্প নিয়ে এখন আর সিনেমা-নাটক তৈরি হচ্ছে না।

মনে প্রশ্ন জাগে- তাহলে কি ভাল গল্প লেখার লেখক নেই বাংলাদেশে? নাকি ভাল গল্প নিয়ে নির্মাতারা সিনেমা তৈরি করতে চাচ্ছেন না? ভালো গল্পের সিনেমা কি দেশে চলছে না? ভালো ব্যবসা করতে পারছে না?

দেশে ভালো গল্প নেই – এ অভিযোগ আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই। বাংলাদেশের প্রতি পরতে-পরতে গল্প। রাস্তার মোড়ে-মোড়ে গল্প। এমন গল্পের দেশ আর কোথায় খুঁজে পাওয়া যায়? বলুন যে জীবনমুখি গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র বানালে দর্শকরা দেখবেন না। শুনেছি তারা নাকি ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘বাবা কেন চাকর’- এর মতো গল্প চান। আসলেই কি তাই?

যখন ‘বাবা কেন চাকর’ নির্মিত হয়েছিল তখন দেশের আনাচে কানাচে সিনেমা হলগুলো ভেঙ্গে বড়-বড় শপিং মল তৈরি হচ্ছিলো। কারণ, সবাই নাকি দেশি সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছলেন। বিদেশি সিনেমার সিডি দেখানো হতো চায়ের দোকানে। বিদেশি সিনেমা দেখবেন না কেন? বিদেশি সিনেমার কলা-কৌশল, নির্মাণ শৈলি এবং অভিনয় আর দেশি সিনেমার মান কি এক? বুঝলাম এক নয়, কখনওই এক ছিল না, তবুও একটি সময় ছিল দর্শক দেশি সিনেমা দেখতেন। এখন কেন দেখছেন না তার অনেক কারণ আছে, তবে দেশে ভালো গল্প পাওয়া যাচ্ছে না তা মানতে রাজি নই।

প্রথম প্রকাশঃ বার্তা২৪- https://barta24.com/details/যুক্তিতর্ক/9199/অনিয়ম-বিষাক্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *