
বাংলার মাটি ও বিদেশি গাছ
এই ধরনের খবর সাধারণত ভেতরের পাতার কোনায় পড়ে থাকে। গুরুত্বহীন মনে করা হয়। তবে এই বিষয়ই আমাদের সামগ্রিক অস্তিত্বতে কতটা প্রভাব ফেলে সেই চিন্তা অনেক পরে আসে। [কোন এক রাতে স্বপ্নে দেখতে চাই যে কোন একটি পত্রিকা এমন খবর প্রধান শিরোনাম করেছে]।
এক কাগজে এসেছে পটুয়াখালীর দশমিনায় সড়কের পাশে সামাজিক বনায়নে ক্ষতিকর গাছ লাগানোতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আকাশি গাছ। সাধু নাম আকাশমনি। অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির জাত। রাস্তার দু’পাশে শোভা বাড়াতে এই গাছ লাগানো হয়। পাতাগুলো ইউক্যালিপ্টাসের পাতার মত। হয়তো ইউক্যালিপ্টাস’ই হবে, আমি জানি না।
এ সব গাছের কারণে ধান গাছে রোগ ও পোকার আক্রমণ খুব বেশি বেড়েছে। এই গাছের আশেপাশের এলাকায় ধানক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। আকাশি গাছের পাতা সহজে পচে না এবং কৃষিক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
আমাদের বন বিভাগ বনায়ন করছে তা খুবই ভাল খবর। তবে আমাদের মাটি, প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে যায় না, এমন গাছের বনায়ন আমরা অনেক দিন ধরেই করে আসছি। ছোটবেলায় ঝিনাইদায় দেখেছিলাম ইউক্যালিপ্টাস [ইউক্যালিপ্টাস নিয়ে আমাদের কবিরা অনেক কবিতাও লিখেছেন], পরে সারা দেশে দেখেছি ইপিল ইপিল, সমুদ্রপাড়ে ঝাউ গাছ। আরও অনেক আছে – আমি জানিও না। এখন দেশে ৪৬ প্রজাতির বিদেশি উদ্ভিদ আছে।
ভাল খবর হচ্ছে, সরকারি নার্সারিগুলোতে আকাশমনি, ম্যানজিয়াম গাছের চারা উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে।
বিদেশি গাছ বা উদ্ভিদ হয়তো আমাদের বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াবে, রাস্তার পাশে দেখতেও সুন্দর লাগবে। কিন্তু তা আমাদের মাটি, জল ও স্থানীয় ফসলের জন্যে কতটা ভাল তা না পরীক্ষা করে তার বনায়ন করা ঠিক হবে না।
কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদাহ, যশোর, কালীগঞ্জ, জীবননগর এলাকায় যারা গেছেন তারা হয়তো কড়ই গাছ [শিরিষ]। অনেক গাছ আছে এক’শ বছর আগের। আমি জানি না কড়ই কোন বিদেশি গাছ কিনা, তবে ঐ গাছ নিয়ে নেতিবাচক কিছু শুনিনি কখনও। এগুলোও তো দেখতে অনেক সুন্দর। সড়কের দু’পাশে যখন বড় হয়, সেই সড়ককে একটা লম্বা সুড়ঙ্গের মত মনে হয়।
আমার মা বাড়িতে ফুলের বাগান করতেন আর বাবা সারা বছর শাক-সবজি রোপন করতেন। আমাদের এক পন্ডিত স্যার ছিলেন; প্রায়ই দেখতাম বাড়ি ফেরার সময় তিনি বাবার সাথে গল্প করছেন। তাদের গল্প আমি কিছু বুঝতাম না, শুধু তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
একদিন শুনি পন্ডিত স্যার বাবাকে বলছেনঃ “শুনুন ঈদ্রীস সাহেব; সব সময় মনে রাখবেন, নিজের মাটিতে প্রাকৃতিক ভাবেই যেই ফল, সবজি ও গাছ জন্মে, সেগুলোই আমাদের জন্যে, অন্য মাটির উদ্ভিদ আমাদের জন্যে নয়।“