
হক স্যার
উনিশ’শ তিয়াত্তর সালের ঘটনা। আমাদের শিশুকুঞ্জ জুনিয়র হাই স্কুল ঝিনাইদাহ ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাসের এ-টাইপ থেকে ইন্টারন্যাশনাল বাংলোর কাছে এসেছে। শ্রেণীকক্ষগুলো চাটাই দিয়ে তৈরি এবং মাথার ওপর টিনের চাল।
ক্লাসে শিক্ষক না থাকলে যা হয়। ক্লাস টু’র ছাত্রছাত্রীরা মহাকোলাহল করছে। চিল্লাচিল্লি, দুষ্টুমি, হাসাহাসি।
এই সময় ঝড়ের বেগে ঢুঁকলেন হক স্যার। আমাদের অংকের শিক্ষক। হাতে ছিল একটা ভাঙ্গা চেয়ারের লাঠি। ছোট্ট। সেটির গায়ে যে একটা পেরেক ছিল স্যার জানতেন না। আমি ছিলাম প্রথম বেঞ্চে। স্যার কাউকে কিছু না বলে, আমার হাতে আঘাত করলেন। পেরেকটি এক আঙ্গুলে গেঁথে গেল। আমি আহত হলাম।
স্যার এমন পরিস্থিতি আশা করেননি। তিনি মহাবিব্রত হয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমায় সেবা দিলেন আমার সহপাঠীরা এবং অন্য শিক্ষকগণ।
স্কুল কর্তৃপক্ষ স্যারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছিল আমি জানি না; আমার মাতাপিতা তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেছিলেন কিনা তাও আমি জানি না।
হক স্যার তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছে দুইটাকা মূল্যের বই বিক্রি করতেন। সবই নবীদের জীবন কাহিনী। আমার মা তাঁর কাছ থেকে অনেক বই আমায় কিনে দিয়েছিলন। অনেকটা এই স্যারের কারণেই বইয়ের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মেছিল।
সেই আঘাতের পরও আমি স্যারের কাছ থেকে বই কেনা থামাইনি। স্যারকে কখনও অশ্রদ্ধা করিনি। তবে সেই আঘাতের চিহ্ন এখনও আমার আঙ্গুলে আছে; সেই দিনের কথা মনে আছে।